আমাদের আদি নিবাস ও আমার আব্বা প্রসঙ্গে
নিউইর্য়ক থেকে - আনম আবদুস সোবাহান:
আমার আদি নিবাস গোপালগঞ্জের মকসুদপুর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের নারায়নপুর গ্রাম। আগে ফরিদপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এক সময়ে বৃটিশ আমলে এই গ্রামসহ একটি অংশ যশোর জেলাভুক্ত ছিল।

আমার আব্বা ১৯৪৩ সালে ফরিদপুরে এসে আইন ব্যবসা শুরু করেন। সে আমলে মুসলমান আইনজীবীর সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। ফরিদপুরে প্রখ্যাত হিন্দু আইনজীবী উকিল ও মোক্তার ছিলেন। ফরিদপুরের উল্লেখযোগ্য লোক বলতে এই আইনজীবী, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক ও শিক্ষকদের প্রায় সবাই গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও গোয়ালন্দ থেকে এসেছিলেন। অল্প কিছু সংখ্যক মূল ফরিদপুর অর্থাৎ ফরিদপুর সদরের আশ পাশ থেকে আসা। ফরিদপুরে বহু রায় বাহাদুর ও খান বাহাদুরও ছিলেন। সে আমলে আইনজীবী শব্দই চালু ছিল না। এডভোকেটও ছিল না। উকিল বা মোক্তার। কলকাতা থেকে আইন পাস করতে হত। স্বাধীনতা উত্তর উকিল মোক্তার বিভাজন আওয়ামী লীগ সরকার উঠিয়ে দেয়। প্রত্যেকে মোক্তার বারের সদস্যরা বার কাউন্সিলে পরীক্ষা দিয়ে উকিল হবার সনদ পান। দু’একজন পরীক্ষা না দিয়ে মোক্তার থেকে যান। এমন মোক্তারদের মধ্যে আমার পরিচিত কমলাপুরের আবদুল গফুর একজন। তিনি আমার বোন লিলিকে প্রাইভেট পড়াতেন বাসায় এসে। আবদুল গফুর একজন কবি ছিলেন। মাসিক গণমনে তাঁর অনেক কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল। এই মোক্তারদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মোক্তারদের ইতি ঘটে। আব্বা বার কাউন্সিল থেকে সনদ নিয়ে উকিলদের তালিকাভুক্ত হন। অনেক দিন প্রাক্টিস করেন। পরে বার্ধক্যজনিত কারণে প্রাক্টিস করতে মানা করা হয়। তবে প্রাক্টিস না করলেও উকিল বার লাইব্রেরিতে আসা যাওয়া করতেন। পরে শারীরিক কারণে তাও আর সম্ভব ছিল না। দিন রাত বাড়িতে থাকতে। শুধু শুক্রবার দিন আমার সাথে স্থানীয় হিতৈষী স্কুল সংলগ্ন মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে যেতেন।আব্বার দীর্ঘ দিনের অভ্যাস ছিল নিয়মিত ইসলামী গ্রন্থ পড়া ও কুরআন শরীফের অনুবাদ পড়া। যতদূর মনে পড়ে ১৯৫৭ সালে মওলবী আবদুল হাকিমের কোরআন শরীফের বাংলা অনুবাদ পারা অনুযায়ী বের হলে আব্বা সংগ্রহ করেন ও ত্রিশ পারা তিন ভাগ করে বাধাই করে আনেন। এই অনুবাদ ছিল আব্বার প্রায় নিত্য দিনের সাথী।
# প্রফেসর আ ন ম আবদুস সোবহান, সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। কবি, গল্পকার ও গবেষক।



Admin
